ভক্ত বন্দনা

জয় জয় রামকৃষ্ণ বাঞ্ছাকল্পতরু ।
জয় জয় ভগবান জগতের গুরু ॥
জয় জয় রামকৃষ্ণ ইষ্টগোষ্ঠীগণ ।
সবার চরণরেণু মাগে এ অধম ॥


গললগ্ন-কৃতবাস ভক্তগণ আগে ।
সবার চরণ-রেণু অভাগিয়া মাগে ॥ ১ ॥

রামকৃষ্ণ-ভক্তসম নাহি কিছু আর ।
যাদের হৃদয়মধ্যে প্রভুর আগার ॥ ২ ॥

যাহা কিছু নাহি মিলে শাস্ত্র-আলাপনে ।
অনায়াসে হয় লভ্য ভক্ত-দরশনে ॥ ৩ ॥

ভক্তের অসাধ্য কিছু নাহিক সংসারে ।
পঙ্গুরে করিলে দয়া লঙ্ঘে গিরিবরে ॥ ৪ ॥

অন্ধেরে করিলে কৃপা দিব্যচক্ষু মিলে ।
সুমধুর গুপ্ত খেলা দেখে কুতুহলে ॥ ৫ ॥

শুষ্ক কাঠে যদি কৃপা-কণা দান করে ।
স্কুল পত্র প্রসবিয়া তখনি মুঞ্জরে ॥ ৬ ॥

আচোট পাষাণে যদি দেখে আঁখি মিলে ।
দ্রবময়ী বারি হ'য়ে স্রোত বহি চলে ॥ ৭ ॥

সুমূর্থ উপরে যদি দয়া উপজয় ।
আগম নিগম বেদ হৃদয়ে উদয় ॥ ৮ ॥

ভক্তি বলি যেই বস্তু ভক্তি-শাস্ত্রে বলে ।
শাস্ত্র-অধ্যয়নে সেই ভক্তি নাহি মিলে ॥ ৯ ॥

পঞ্জিকাতে যেন কত আড়া জল লেখা ।
নিঙ্গুড়িলে পাঁজি নাহি বিন্দু যায় দেখা ॥ ১০ ॥

সেইমত ভক্তি-শাস্ত্রে ভক্তি-বিবরণ ।
আছে মাত্র নাহি মিলে ভকতি-রতন ॥ ১১ ॥

সেই ভক্তি লাভ ভক্ত-সেবনেতে হয় ।
সত্যাপেক্ষা অতি সত্য কহিনু নিশ্চয় ॥ ১২ ॥

প্রভুপদ লভিতে যাহার আছে মন ।
আগে ভজ শ্রীপ্রভুর ভকত-চরণ ॥ ১৩ ॥

ভক্তের মহিমা-গানে নাহিক শকতি ।
সুমূর্খ পামর আমি হীনবুদ্ধি-মতি ॥ ১৪ ॥

প্রভুভক্ত সম পূজা আর কিবা আছে ।
গুরুভক্ত-পদরজ অভাগিয়া যাচে ॥ ১৫ ॥

কৃপাবিন্দু ভক্ত-বৃন্দ কর মোরে দান ।
অধমেরে যুগল চরণে দেহ স্থান ॥ ১৬ ॥

পদরজ বিনে মম গতি নাহি আর ।
রজ-রত্ন দিয়া হবে করিতে উদ্ধার ॥ ১৭ ॥

আর এক মাগি ভিক্ষা তোমা সবা ঠাঁই ।
দেহ শক্তি ঠাকুরের লীলা কিছু গাই ॥ ১৮ ॥

রামকৃষ্ণ-লীলাগানে বড় অভিলাষ ।
কারণ তাহার নিয়ে করিনু প্রকাশ ॥ ১৯ ॥

সহরে চাকুরি করি পাড়াগাঁয়ে ঘর ।
অন্নকষ্ট হেতু চিরকাল দেশান্তর ॥ ২০ ॥

যৎসরান্তে যদি কিছু দিন ছুটি পাই ।
দেখিবারে সবে ঘরে দেশে চ'লে যাই ॥ ২১ ॥

নাহি পেলে অবসর যাওয়া নাহি হয় ।
স্নেহময়ী জননীর দুঃখ অতিশয় ॥ ২২ ॥

সিন্নি মানসিক মাতা করে সত্যপীরে ।
দিব পূজা সত্যপীর ছেলে এলে ঘরে ॥ ২৩ ॥

একবার ঘরে যবে জননী আমার ।
হাঁড়ি হাঁড়ি মোয়ালাড়ু করি স্তূপাকার ॥২৪ ॥

পূজা দেন সত্যপীরে শুভবার তিথি ।
পুরোহিতে করে পাঠ সত্যপীর পুঁথি ॥ ২৫ ॥

শুনিতে শুনিতে পুঁথি কেঁদে উঠে প্রাণী ।
কেন সত্যপীর পূজা কেন তায় সিন্নি ॥ ২৬ ॥

দয়াল ঠাকুর মোর পতিতপাবন ।
ক্ষণে ক্ষণে হৃদিমধ্যে হয় উদ্দীপন ॥ ২৭ ॥

সাধ এঁটে ফুটে উঠে অন্তর ভিতরে ।
রামকৃষ্ণ ঠাকুরের পুঁথি পেলে পরে ॥ ২৮ ॥

হেনরূপে নিমন্ত্রিয়া যত গ্রামবাসী ।
রাখিতাম প্রভু-প্রিয় ঝিলিপির রাশি ॥ ২৯ ॥

বসাইয়া সিংহাসনে ঠাকুর আমার ।
চন্দনে সাজায়ে দিতু গলে ফুলহার ॥ ৩০ ॥

আনি তুলে শতদল-পদ্ম অগণন ।
করিতাম চারিধারে কমল-কানন ॥ ৩১॥

আয়োজন নানা ভোজ্য যায় তাঁর প্রীতি ।
আপনি করিতুঁ পাঠ রামকৃষ্ণ-পুঁথি ॥ ৩২ ॥

এই উপজিল সাধ পুঁথি কিসে পাই ।
বিষম সমস্যা পুঁথি লিখি শক্তি নাই ॥ ৩৩ ॥

প্রভু সম প্রভু-ভক্ত অতুল শকতি ।
দয়ায় বনায়ে দেহ রামকৃষ্ণ-পুঁথি ॥ ৩৪ ॥

আমার অতীত সাধ্য নাই বুদ্ধি বল ।
তোমাদের পদরজ ভরসা সম্বল ॥ ৩৫ ॥

কৃপা-শক্তি দিয়া মোরে কর বলীয়ান্‌ ।
যেন পারি করিবারে প্রভু-লীলা গান ॥ ৩৬ ॥

লিখি পুরি লোকখ্যাতি নাহি আশা মনে ।
সুদ্ধমাত্র তাই পুঁথি পাঠের কারণে ॥ ৩৭ ॥

দেহ রামকৃষ্ণভক্তি আর পুঁথি তাঁর ।
তোমা সূরা প্রভু-ভক্তে প্রার্থনা আমার ॥ ৩৮ ॥

নাহি চাই জপ তপ ধ্যান আচরণে ।
সাযুজ্য সালোক্য আদি সামীপ্য নির্বাণে ॥ ৩৯ ॥

নাহি চাই সিদ্ধাই ঐশ্বর্য্য শ্বৰ্য্য আদি যত ।
বিড়ম্বনা মাত্র বোধ নহে মনোমত ॥ ৪০ ॥

সাজাইব মনমত ঠাকুর আমার ।
অবিরত রব রত সেবাতে তাঁহার ॥ ৪১ ॥

মনে মনে এই সাধ উঠে দ্বিবারাতি ।
তাই মাগি তোমা ঠাঁই রামকৃষ্ণ-পুঁথি ॥ ৪২ ॥

            ইতি বন্দনা শেষ।