প্রথম খণ্ড

গোচারণ


জয় জয় রামকৃষ্ণ বাঞ্ছাকল্পতরু ।
জয় জয় ভগবান জগতের গুরু ॥
জয় জয় রামকৃষ্ণ ইষ্টগোষ্ঠীগণ ।
সবার চরণরেণু মাগে এ অধম ॥


বাল্য-লীলা শ্রীপ্রভুর গাইলে শুনিলে ।
চির অন্ধজনে মন দিব্য আঁখি মেলে ॥ ১ ॥

দেখে চোখে লীলাখেলা হৃদি-কুতূহল ।
ত্রিতাপ-সন্তপ্ত চিত নিমেষে শীতল ॥ ২ ॥

গ্রামের বালক যত সবে ভালবাসে ।
দুই দণ্ড না দেখিলে ছুটে ছুটে আসে ॥ ৩ ॥

গদাই-বিহনে খেলা ভাল নাহি হয় ।
সাধ গদা'য়ের সঙ্গে রেতে দিনে রয় ॥ ৪ ॥

আপন আপন ঘর নাহি থাকে মনে ।
দিবানিশি খেলে বুলে গদা'য়ের সনে ॥ ৫ ॥

ঘরে আই ঠাকুরানী করিয়া রন্ধন ।
গদা'য়ের সহ যত বালকে ভোজন ॥ ৬ ॥

করাতেন নিতি নিতি আপন ভবনে ।
দেখিতেন বলে বসে ব্রাহ্মণী ব্রাহ্মণে ॥ ৭ ॥

আইর রন্ধনকথা অপূর্ব বিশেষ ।
গাইলে শুনিলে নাহি রহে দুখলেশ ॥ ৮ ॥

সামান্য রাঁধিলে কভু ফুরাতে না চায় ।
মুষ্টিক তণ্ডুলে গোটা ত্রিভুবন খায় ॥ ৯ ॥

কিন্তু শূন্য পাক-পাত্র আই খেলে পরে ।
মধুর আখ্যান শুন রন্ধন ভিতরে ॥ ১০ ॥

একদিন যায় দিন আর বেলা নাই ।
নাহি খান অন্নজল ঠাকুরানী আই ॥ ১১ ॥

তাহার কারণ, যাহা খাবার না খেলে ।
পাকিতে হইত তাঁর বন্ধ পাকশালে ॥ ১২ ॥

সেই দিন বারে বারে বহু লোক খায় ।
তাই তাঁর থাইবার বেলা ব'য়ে যায় ॥ ১৩ ॥

আর নাই বেশী অন্ন হাঁড়ির ভিতরে ।
হেনকালে কয়জন লোক আসে ঘরে ॥ ১৪ ॥

আগে বলিয়াছি এই ব্রাহ্মণের ঘর ।
জগন্নাথ যাইবার পথের উপর ॥ ১৫ ॥

নিত্য নিত্য সমাগত অতিথি ফকির ।
অসময়ে আজ দশ হইল হাজির ॥ ১৬ ॥

বেশী অন্ন নাই ঘরে দেখি ঠাকুরানী ।
অবিরল চোখে জল সভয় পরাণী ॥ ১৭ ॥

কম্পমান তনুখানি ভাবেন কি হবে ।
না পাইয়া অন্নজল সাধু ফিরে যাবে ॥ ১৮ ॥

তণ্ডুল নাহিক ঘরে রাঁধিবাবে ভাত ।
প্রাণে সারা শিরে যেন পড়ে বস্ত্রাঘাত ॥ ১৯ ॥

হেনকালে দেখিলেন আই ঠাকুরানী ।
নবম-বয়সী এক বালিকা-রূপিণী ॥ ২০ ॥

পশ্চাৎ দাঁড়ায়ে নাড়ে আপনার হাত ।
তাহে অফুরন্ত বাড়ে ব্যঞ্জনাদি ভাত ॥ ২১ ॥

সেদিন হইতে আই নিজে যতক্ষণ ।
অন্নব্যঞ্জনাদি নাহি করেন ভোজন ॥ ২২ ॥

পাকশালে কোন দ্রব্য ফুরাতে না চায় ।
যত আসে সকলেই খাইবারে পায় ॥ ২৩ ॥

নানাবিধ ব্যঞ্জনাদি অন্নসহ রাঁধি ।
বালক-ভোজন ঘরে হয় নিরবধি ॥ ২৪ ॥

তেলি বেণে জেতে এই বালকেরা যত ।
দুঃখী তাই গোচারণে নিত্য যেতে হ'ত ॥ ২৫ ॥

মাঝে মাঝে ল'য়ে যায় শিশু গদাধরে ।
রঙ্গে হয় নানা খেলা অন্তর প্রান্তরে ॥ ২৬ ॥

গদাই বড় খুশী তা সবার সনে ।
খেলে খেলে বুলিবারে গিয়া গোচারণে ॥ ২৭ ॥

বড়ই মধুর এই বাল্য-লীলা-গান ।
গাইতে শুনিতে করে মাতোয়ারা প্রাণ ॥ ২৮ ॥

শুন মন একমনে কহি পরে পরে ।
শুনেছি হইল যেমন কামারপুকুরে ॥ ২৯ ॥

সাধারণ বালকের খেলা যেই মত ।
সে খেলা খেলিতে তাঁর ভাল না লাগিত ॥ ৩০ ॥

প্রান্তরে অন্তর হ'য়ে কোন বৃক্ষমূলে ।
মনোমত খেলা ল'য়ে যতেক রাখালে ॥ ৩১ ॥

ব্রজ খেলা গদায়ের হয় যেন মনে ।
সেই সেই মত গেলা হয় সঙ্গী-সনে ॥ ৩২ ॥

সুবল হইত কেহ, কেহ বা শ্রীদাম ।
কেহ হইতেন দাম, কেহ বসুদাম ॥ ৩৩ ॥

আপনি কানাই তাই কানাইর বেশে ।
কাছে কত গরু গাই চ'রে চ'রে আসে ॥ ৩৪ ॥

কভু ছিড়ি দূর্বাদল খাওয়ান গোধনে ।
কথন দোলেন ডালে বৃক্ষ-আরোহণে ॥ ৩৫ ॥

ডাঙ্গায় বসন রাখি নামিতেন জলে ।
গেলিতেন লয়ে যত রাখাল সকলে ॥ ৩৬ ॥

দূর মাঠে যেতে মানা করে পিতামাতা ।
গদাধর কোনমতে না শুনেন কথা ॥ ৩৭ ॥

পথে ঘাটে চারিভিতে বালকের সহ ।
গেলিয়া বেড়ান গদাধর অহরহ ॥ ৩৮ ॥

বড়ই মধুর কথা মাঠে গোচারণ ।
যতদূর জানি বলি শুন শুন মন ॥ ৩৯ ॥

পাড়াগেয়ে রাখালের এই রীতি চলে ।
ছাড়ি গরু লয় মুড়ি আঁচলে আঁচলে ॥ ৪০ ॥

গ্রাম থেকে মাঠে কিবা বনে লয়ে যায় ।
একত্রে রাখালগণে জলপান খায় ॥ ৪১ ॥

আনন্দের এর যত না যায় বাখ্যান ।
খেতে খেতে নাচে কত, করে কত ধ্বনি ॥ ৪২ ॥

একদিন খায় মুড়ি যতেক রাখালে ।
গদাই লইয়া সঙ্গে কোন বৃক্ষমূলে ॥ ৪৩ ॥

পরস্পর জলপান কাড়াকাড়ি করে ।
তাহা দেখি গদাইয়ের ব্রজভাব স্ফুরে ॥ ৪৪ ॥

একেবারে ভবসিন্ধু উথলি উঠিল ।
ভাবাবেশে বাহ্যজ্ঞান এবে ছেড়ে গেল ॥ ৪৫ ॥

দেখিয়া রাখালবৃন্দ চিন্তাকুল মন ।
গদাই গদাই বলি ডাকে ঘন ঘন ॥ ৪৬ ॥

সবে অতি শিশুমতি কিছুই না জানে ।
বৃদ্ধিপুঞ্জ দেখে অন্যে চেয়ে চারি পানে ॥ ৪৭ ॥

কেহ বা আনিয়ে জল কাপড় ভিজায়ে ।
সজল বসনে দেয় বন্ধন মুছায়ে ॥ ৪৮ ॥

মাঝে মাঝে গদাধরে ভূতে ধরে জানে ।
সেই হেতু রাম নাম বলে যত জনে ॥ ৪৯ ॥

কিছু পরে চাহিলেন চক্ষু দুটি মেলে ।
পরাণ পাইল দেখি রাখাল সকলে ॥ ৫০ ॥

সবে কহে কেন হেন হইল গদাই ।
চক্ষে জল অবিরল মুখে কথা নাই ॥ ৫১ ॥

হাত দুটি ঘন ঘন কেন কেঁপে উঠে ।
দেখে আমাদের বুদ্ধি নাহি রহে ঘটে ॥ ৫২ ॥

গরু চরাইতে আর আনিব না তোরে ।
একাকী থাকিও তুমি আপনার ঘরে ॥ ৫৩ ॥

পাইয়াছি লোকমুখে যেন পরিচয় ।
জন্মাবধি হ'তো মহাভাবের উদয় ॥ ৫৪ ॥

কোনখানে ঈশ্বরীয় চর্চা হ'লে পর ।
নিশ্চয় তথায় উপনীত গদাধর ॥ ৫৫ ॥

ভাগবত-কথা যাত্রা কীর্তনাদি যত ।
শুনিবারে গদাধর বড়ই 'বাসিত ॥ ৫৬ ॥

লইয়া সমান-বয়ঃ বালকের গণে ।
গমন না যার ফাঁক যা হয় সেখানে ॥ ৫৭ ॥

একবার মাত্র কিছু করিলে শ্রবণ ।
জনমের মত তাহা থাকিত স্মরণ ॥ ৫৮ ॥

সেই হেতু গোটা গোটা, পালা পালা গান ।
আগাগোড়া জানিতেন প্রভু ভগবান ॥ ৫৯ ॥

যতেক রাখালবৃন্দ গোচারণে জুটে ।
অপরূপ হয় যাত্রা দূরান্তর মাঠে ॥ ৬০ ॥

একদিন সঙ্গিসহ মাঠে গোচারণে ।
হঠাৎ মাথুর কথা পড়ে গেল মনে ॥ ৬১ ॥

বলেন রাখালগণে এস এস ভাই ।
মাথুর বিরহ-গান সবে মিলে গাই ॥ ৬২ ॥

সমস্বরে দিল সায় যত সাঙ্গগণ ।
বৃক্ষমূলে যাত্রারম্ভ হইল তখন ॥ ৬৩ ॥

অতি পুলকিত অঙ্গ গদাই আনন্দে ।
কাহারে করেন সথী কৈলা কারে বৃন্দে ॥ ৬৪ ॥

আপনে হইলা নিজ রাই কমলিনী ।
বিদগ্ধ বিরহ-গান ধরিল তখনি ॥ ৬৫ ॥

গাইতে গাইতে গীত বিহ্বল হইলা ।
পরাণ-বঁধুয়া বলি কাঁদিতে লাগিলা ॥ ৬৬ ॥

কোথা কৃষ্ণ, কই কৃষ্ণ, কৃষ্ণে দাও এনে ।
হায় কৃষ্ণ, হায় কৃষ্ণ, রব ঘনে ঘনে ॥ ৬৭ ॥

ভিজিল বসন গোটা নয়নের জলে ।
বাহু জ্ঞান-বিহীন পতিত ধরাতলে ॥ ৬৮ ॥

ব্যাকুলপরাণ হৈল যত সঙ্গিগণ ।
কি হ'ল কি হ'ল বলি করয়ে রোদন ॥ ৬৯ ॥

কেহবা আনিয়া জল দেয় চোখে-মুখে ।
কেঁদে কেঁদে কেহ বা গদাই বলি ডাকে ॥ ৭০ ॥

ভূতে যেন ধরে তাই মনে বিচারিয়া ।
রামনাম হরিনাম ডাকে উচ্চারিয়া ॥ ৭১ ॥

তার মধ্যে একজন কয় উচ্চরোলে ।
হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ ব'লে ॥ ৭২ ॥

প্রাণ-সঞ্চারিণী মন্ত্র কৃষ্ণনাম শুনি ।
কোথা কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি চাহিলা অমনি ॥ ৭৩ ॥

ঐ দাঁড়াইয়া কৃষ্ণ কৃষ্ণ প্রাণনাথ ।
আবেশে ধরিতে যান প্রসারিয়া হাত ॥ ৭৪ ॥

কৃষ্ণ-নামে গদা'য়ের চৈতন্ত দেখিয়া ।
সবে কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে চৌদিকে বেড়িয়া ॥ ৭৫ ॥

সুস্থিরপরাণ দেখি শিশু গদাধরে ।
ফিরাইল ধেনুপাল ফিরিবারে ঘরে ॥ ৭৬ ॥

কোন কোন দিন মাঠে হ'ত সংকীর্তন ।
নাম-নাদে হ'ত ভেদ অখণ্ড গগন ॥ ৭৭ ॥

শিশুরূপী ভগবান শিশু সঙ্গে করে ।
কতই করিলা খেলা কামারপুকুরে ॥ ৭৮ ॥

গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে বাড়ুয্যে-বাগান ।
সেইখানে ছিল তাঁর গোচারণ স্থান ॥ ৭৯ ॥

অতি মনোরম স্কুল মাঠের মাঝারে ।
শিয়রে ভূতির খাল বয় ধীরে ধীরে ॥ ৮০ ॥

গ্রামের অনতিদূর বড়ই নির্জন ।
ছোট ছোট আম-গাছে বাগিচা শোভন ॥ ৮১ ॥

কাণ্ড-শাখা বক্রভাবে ঝোলা এত নীচে ।
অল্পবয়ঃ সেও পারে উঠিবারে গাছে ॥ ৮২ ॥

বালক সসঙ্গ প্রভু বালক যেমন ।
ছোট ছোট আম-গাছ বাগানে তেমন ॥ ৮৩ ॥

মহাভাগ্যবান সেই বাঁড়ুয্যে-সন্তান ।
বাল্য-লীলাম্বলী ছিল যাঁহার বাগান ॥ ৮৪ ॥

প্রভু খেলিবেন যেন আগে হ'তে জানি ।
বাগান করিয়াছিল বাগানের স্বামী ॥ ৮৫ ॥

কেবা এ বাড়ুয্যে যেবা করিল বাগান ।
শুন মন প্রভু তাঁয় কত কৃপাবান ॥ ৮৬ ॥

শ্রীমানিক নাম ভুরসুবা গ্রামে ঘর ।
কামারপুকুর হ'তে অনতি অন্তর ॥ ৮৭ ॥

ধনাঢ্য তালুকদার উদার-প্রকৃতি ।
অতিথি-সেবনে ছিল বড়ই পিরীতি ॥ ৮৮ ॥

ভগবৎপরে তাঁর ছিল অতি মন ।
প্রশান্ত-উদ্বার-চিত্ত দারিদ্র্য-মোচন ॥ ৮৯ ॥

পরহিতে সদা রত পর-উপকারী ।
জীবন যাপন মাত্র এই কর্ম করি ॥ ৯০ ॥

বিষয়ে তাঁহার যত জনমিত আয় ।
অতিথি-বৈষ্ণব-সেবা-কার্যে সব যায় ॥ ৯১ ॥

হরিপদলুব্ধচিত মহামতিমান ।
মানিক বাঁড়ুয্যে এই তাঁহার বাগান ॥ ৯২ ॥

বাল্য-লীলাস্থলী হবে বুঝি সমাচার ।
রচিয়া বাগান কৈল দেহ পরিহার ॥ ৯৩ ॥

প্রভুর কৃপার পাত্র বাঁড়ুয্যে তনয় ।
শুন মন ক্রমে ক্রমে কহি পরিচয় ॥ ৯৪ ॥

বাল্য-লীলা যে সময় কামারপুকুরে ।
কিছু আগে মানিক গিয়াছে দেহ ছেড়ে ॥ ৯৫ ॥

কেহ কয় তখন আছিল দেহ তাঁর ।
বলিতে নারিনু কিবা সত্য সমাচার ॥ ৯৬ ॥

পরে তাঁর সহোদর উত্তরাধিকারী ।
যেমন অগ্রজ তাঁর ধর্মে মন ভারী ॥ ৯৭ ॥

পরিবার যত তাঁর গড়া এক ছাঁচে ।
সবে ভক্ত, তর তম সাধ্য কার বাছে ॥ ৯৮ ॥

মানিকের বংশে যত মানিক সবাই ।
বারে বারে যার ঘরে গেলেন গদাই ॥ ৯৯ ॥

বড়ই শৈশব যবে জনকের সনে ।
রগড় করিয়া যান মানিক-ভবনে ॥ ১০০ ॥

মানিকের ঘরে যত রমণী সকলে ।
অতিশয় আনন্দিত গদায়ে দেখিলে ॥ ১০১ ॥

পরম সুন্দর শিশু লম্বমান বেণী ।
ঝাঁপা দিয়া সাজাতেন আই ঠাকুরানী ॥ ১০২ ॥

কোমরেতে আঁটা গোট বালা দুই হাতে ।
রঙ্গিন-বসন-পরা সুন্দর দেখিতে ॥ ১০৩ ॥

অপরূপ খেলে রূপ শ্রীবদন-মাঝে ।
চলিতে বেণীতে বদ্ধ ঝুরি-ঝাঁপা বাজে ॥ ১০৪ ॥

অমিয়-বরধি বাক্য ক্ষরে আধা আধা ।
রসনার স্বভাবতঃ জড়তায় বাঁধা ॥ ১০৫ ॥

কিবা সুধা ধরে সুধা মিষ্টতার গুণ ।
শিশুবাণী শুনে লাগে তিক্ত শতগুণ ॥ ১০৬ ॥

শ্রবণ-বিমুগ্ধ বাক্য শিশুর বদনে ।
মুগ্ধচিত সেই তত যেই যত শুনে ॥ ১০৭ ॥

অন্তঃপুরবাসিনীরা সবে করে কোলে ।
অপার আহলাদ হৃদে স্রোত বহি চলে ॥ ১০৮ ॥

প্রভুর জনকে কহে যত নারীগণ ।
তোমার তনয়ে নাই মানব-লক্ষণ ॥ ১০৯ ॥

ভক্তিমতী মানিক-গৃহিণী একবার ।
গড়ায় মনের মত কত অলঙ্কার ॥ ১১০॥

অন্তঃপুরে গদাধরে দেয় সাজাইয়ে ।
একত্তরে তাহাদের যত সব মেয়ে ॥ ১১১ ॥

গদাধরে মুগ্ধমন এত সবাকার ।
না দেখিলে কিছু দিন দেখিত আঁধার ॥ ১১২ ॥

লোক পাঠাইয়া দিত কামারপুকুরে ।
আদরের গদাধর আনিবারে ঘরে ॥ ১১৩ ॥

নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করিয়া ।
প্রভুর বদনে দিত গল্প হৈয়া ॥ ১১৪ ॥

কখন মিষ্টান্ন হাতে প্রত্যেক রমণী ।
গদাধরে বলিতেন কার লবে তুমি ॥ ১১৫ ॥

শিশুমতি গদাধার করি লম্ফ দান ।
হাতে করি সকলের মিষ্টি কাড়ি খান ॥ ১১৬ ॥

শুনিয়াছি ব্রজভূমে গোঠগোচারণে ।
ক্ষুধার্ত রাখালবৃন্দ হয় এক দিনে ॥ ১১৭ ॥

বিশুষ্ক-বন্ধন কহে কানাইর ঠাঁই ।
ক্ষুধায় কাতর প্রাণ কি খাইব ভাই ॥ ১১৮ ॥

তুমি রাখালের রাজা সম্বল সহায় ।
বিজন বিপিনে বাঁচি করহ উপায় ॥ ১১৯ ॥

শুনি বাণী কানু পাঠাইল সবাকারে ।
ব্রাহ্মণগণের যজ্ঞে অন্ন মাগিবারে ॥ ১২০ ॥

অবজ্ঞা করিয়া ব্রাহ্মণেরা নাহি দিল ।
যেখিয়া ব্রাহ্মণীগণ ব্যাকুলা হইল ॥ ১২১ ॥

খালে খালে ল'য়ে অন্ন লুকাইয়া চলে ।
বিরাজে কানাই যথা বেষ্টিত গোপালে ॥ ১২২ ॥

ব্রাহ্মণীগণের অনুরাগে ভরা দেখি ।
কানাই কহিলা যত সঙ্গিগণে ডাকি ॥ ১২৩ ॥

এস ভাই ওই অন্ন খাইব মিলিয়া ।
এত বলি খাল লয় কাড়িয়া কাড়িয়া ॥ ১২৪ ॥

আনন্দে ভোজন দেখে যতেক রমণী ।
ইহারা নিশ্চয় বটে সে সব ব্রাহ্মণী ॥ ১২৫ ॥

মানিক-আগার সত্য মানিক আগার ।
পদরজ সবাকার মাগি বার বার ॥ ১২৬ ॥

দয়া কর প্রভুপদে রহে যেন মতি ।
যত দিন বাঁচি লিখি রামকৃষ্ণ-পুঁথি ॥ ১২৭ ॥

লীলা-গীতি লিখিবারে বাসনা প্রবল ।
তোমাদের কৃপাকণা কেবল সম্বল ॥ ১২৮ ॥