প্রথম খণ্ড

পণ্ডিতগণের পরাভব


জয় জয় রামকৃষ্ণ বাঞ্ছাকল্পতরু ।
জয় জয় ভগবান জগতের গুরু ॥
জয় জয় রামকৃষ্ণ ইষ্টগোষ্ঠীগণ ।
সবার চরণরেণু মাগে এ অধম ॥


মাধুর্যের রসে পূর্ণ বাল্য-লীলা তাঁর ।
গাইতে সে সব খুলে কি সাধ্য আমার ॥ ১ ॥

শুনিতে বাসনা যদি থাকে তোর মন ।
এস দুইজনে করি তাঁহারে স্মরণ ॥ ২ ॥

বাঞ্ছাকল্পতরু তিনি, ভক্তজনে রটে ।
যার যাহা হয় সাধ কৃপাবলে মিটে ॥ ৩ ॥

জয় জর দীননাথ কৃপার আকর ।
জয় জয় শিশুরূপী প্রভু গদাধর ॥ ৪ ॥

জয় যুগ-অবতার অন্ধের শরণ ।
কৃপা করি কর মুক্ত দুখানি নয়ন ॥ ৫ ॥

কাঠাকে পর্যন্ত বিদ্যা বাহ্যেতে আভাস ।
অপার বিস্তার তত্ত্ব খেলায় প্রকাশ ॥ ৬ ॥

অদ্ভুত মহিমা কথা শুন অতঃপর ।
লিখিবারে দেহ শক্তি প্রভু গদাধর ॥ ৭ ॥

জয় জয় সিদ্ধকাম সর্বসিদ্ধি-দাতা ।
জয় সর্বশক্তিমান অনন্ত বিধাতা ॥ ৮ ॥

গ্রামেতে বর্ধিষ্ঠ গোঙা লাহা নামে খ্যাত ।
নানা কাজে অর্থব্যয় প্রচুর করিত ॥ ৯ ॥

একবার শ্রাদ্ধক্রিয়া তাঁহাদের ঘরে ।
দেশের পণ্ডিত যত নিমন্ত্রণ করে ॥ ১০ ॥

কোন টোল নাহি ফাঁক যে আছে যেখানে ।
আবাহন করিলেন পত্রিকা-প্রেরণে ॥ ১১ ॥

ঘটা পরিসীমা কিবা না হয় বর্ণন ।
ছাত্রসহ দলে দলে পণ্ডিত ব্রাহ্মণ ॥ ১২ ॥

আসিয়া করিল সভা নির্ধারিত দিনে ।
যথাকালে বসিলেন শাস্ত্র-আলাপনে ॥ ১৩ ॥

কথার প্রসঙ্গে গোল উঠিল মহতী ।
টোলের পণ্ডিতদের যে-প্রকার রীতি ॥ ১৪ ॥

হউন বা না হউন নিপুণ বিচারে ।
প্রসারিয়া হস্তপদ গোলে মাত্র সারে ॥ ১৫ ॥

চতুর্দিকে রাষ্ট্র কথা হইয়াছে দেশে ।
যথাদিনে লোকজনে দেখিবারে আসে ॥ ১৬ ॥

শুনি গোল উচ্চ রোল আসিয়া জুটিল ।
মাঠে-ঘাটে কর্ম-কাজে যে যেথায় ছিল ॥ ১৭ ॥

সঙ্গী সনে রঙ্গ করি শিশু-গদাধর ।
উপনীত হইলেন সভার ভিতর ॥ ১৮ ॥

বিচার করেন সেই পণ্ডিতের দলে ।
প্রসঙ্গের গূঢ় গ্রন্থি সব দেন খুলে ॥ ১৯ ॥

শাস্ত্রের নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝা যাহা ভার ।
তাহাই গদাই ল'য়ে করেন বিচার ॥ ২০ ॥

বিচারের দেখি ঘুম সবে একে একে ।
আসিয়া বেড়িল শিশু-প্রভুকে চৌদিকে ॥ ২১ ॥

সপ্তরথিমধ্যে যেন অভিমন্যু-রণ ।
বিচারে আগুন ছুটে ন্যূন নাহি হন ॥ ২২ ॥

বড়ই তাজ্জব কথা অপার বিস্ময় ।
পণ্ডিত শিশুর কাছে পরাভব হয় ॥ ২৩ ॥

অল্প বয়স শিশু বুলে খেলে খেলে ।
শাস্ত্রের নিগূঢ় মর্ম কেমনে বুঝিলে ॥ ২৪ ॥

নানা জনে নানারূপ বলাবলি করে ।
অদ্ভুত শকতি দেখি শিশুর ভিতরে ॥ ২৫ ॥

একে ত সুন্দর শিশু বঙ্কিম নয়ন ।
শ্রীবয়ানে মাথা কান্তি শোভা নিরুপম ॥ ২৬ ॥

লম্বমান শোভে বেণী শিরের উপরে ।
পীযূষ-পুরিত কথা রসনায় ঝরে ॥ ২৭ ॥

আজানুলম্বিত বাহু-যুগ-প্রসারণে ।
মহাদন্তে শাস্ত্রালাপ ধীরগণ-সনে ॥ ২৮ ॥

অবাক্ হইয়া দেখে মহা অসম্ভব ।
নিরক্ষর সুপণ্ডিত শাস্ত্রজ্ঞ শৈশব ॥ ২৯ ॥

জিজ্ঞাসা করেন শেষে শিশুবর কার ।
এ হেন বয়সে করে শাস্ত্রের বিচার ॥ ৩০ ॥

যেসব পণ্ডিত শাস্ত্রে আগুয়ান দূর ।
কহে আছে দৈবশক্তি নিশ্চর শিশুর ॥ ৩১ ॥

পরিচিত-কাছে তাঁর পরিচয় পেয়ে ।
সকলে আশিস করে আনন্দিত হ'য়ে ॥ ৩২ ॥

গ্রামবাসিমধ্যে কথা রাষ্ট্র হয় পরে ।
পণ্ডিতমণ্ডলী আজি পরাস্ত বিচারে ॥ ৩৩ ॥

গদাইর কাছে হৈল সবে পরাজয় ।
কি আশ্চর্য কি আশ্চর্য সকলেতে কয় ॥ ৩৪ ॥

আনন্দে উথলে হৃদি ছাড়িয়া আধার ।
প্রাণের স্বরূপ গদাধর সবাকার ॥ ৩৫ ॥

যে যেখানে ছিল ছুটে আসে দেখিবারে ।
কি পুরুষ কিবা মেয়ে গ্রামের ভিতরে ॥ ৩৬ ॥

বদন-চন্দ্রিমা হেরে তত্ত্ব যায় ভুলে ।
মহৈশ্বর্য শ্রীপ্রভুর বালকের ছলে ॥ ৩৭ ॥

ঐশ্বর্যে ঐশ্বর্যজ্ঞান নাহি এই দেশে ।
মহানন্দে মুগ্ধ-চিত মাধুর্যের রসে ॥ ৩৮ ॥

ভালবাসা মমতা কেবল বৃদ্ধি পায় ।
মধুর খেলার ভিত্তি শৈশব-লীলায় ॥ ৩৯ ॥

গোকুলনগরে যেন কৃষ্ণ-অবতারে ।
আত্মহারা একমাত্র কৃষ্ণ-মুখ হেরে ॥ ৪০ ॥

অনুরূপে খেলা দেখি এখানেও তাই ।
ঐশ্বর্য-বিষয়াদির গন্ধমাত্র নাই ॥ ৪১ ॥

একে ত শৈশব বয়ঃ প্রভুর আমার ।
নয়ন বিনোদঠাম রূপের আগার ॥ ৪২ ॥

বিমোহন বাল্য-ভাব মাখা সর্ব গায় ।
দেখামাত্র মনপ্রাণ তাহাতে ডুবায় ॥ ৪৩ ॥

অপরূপ শিশু কব কি তাঁর কাহিনী ।
অহরহঃ স্মর মন চরণ দু'খানি ॥ ৪৪ ॥

বাল্যলীলা শ্রীপ্রভুর অপূর্ব ভারতী ।
একমনে শুন মন রামকৃষ্ণ-পুঁথি ॥ ৪৫ ॥