দ্বিতীয় খণ্ড
গুরুমাতা-বন্দনা
জয়
জয় রামকৃষ্ণ বাঞ্ছাকল্পতরু ।
জয় জয় ভগবান জগতের গুরু ॥
জয় জয় রামকৃষ্ণ ইষ্টগোষ্ঠীগণ ।
সবার চরণরেণু মাগে এ অধম ॥
জয় জয় শ্রীশ্রীমাতা জগত জননী ।
গুণময়ী গুণাতীত ব্রহ্ম সনাতনী ॥ ১ ॥
অখণ্ডা অরূপা তুমি তুমি নিরুপমা ।
পুরুষ
প্রকৃতি তুমি তুমি মা প্রধানা ॥ ২ ॥
সৃষ্টির অঙ্কুর তুমি সকলের মূল ।
তুমি মা
চব্বিশ তত্ত্ব তুমি সূক্ষ্ম স্থুল ॥ ৩ ॥
তোমার ইচ্ছায় সৃষ্টি স্থিতিতে পালন ।
পুনঃ রাখ কোলে ল'য়ে করিয়া নিধন ॥ ৪ ॥
খেলার ডালি মা তোমার গোটা সৃষ্টিখানি ।
লীলাময়ী লীলাপরা লীলাস্বরূপিণী ॥ ৫ ॥
একা তুমি অদ্বিতীয়া আপন মায়ায় ।
ধরিয়াছ
বহুরূপ জগৎ লীলায় ॥ ৬ ॥
আপনার অখণ্ডতা করি খণ্ড খণ্ড ।
গঠেছ অগণ্য 'আমি' রচিতে
ব্রহ্মাণ্ড ॥ ৭ ॥
গুপ্তভাবে আপ্ত লীলা কর গো জননী ।
মায়ায় তোমার জীবে করে 'আমি
আমি' ॥ ৮ ॥
মা তোমার নরলীলা লীলাশ্রেষ্ঠ গণি ।
অযোধ্যায় সীতারূপে জনকনন্দিনী ॥ ৯ ॥
রামময় প্রাণ-ভাব প্রাণের আরাম ।
মন প্রাণ ধ্যান জ্ঞান দূর্বাদলশ্যাম ॥ ১০ ॥
আগোটা জনম দুঃখ সহিলে পরাণে ।
জনম-দুঃখিনী সীতা পুরাণে বাখানে ॥ ১১ ॥
বৃন্দাবনে
রাইরূপে কৃষ্ণ-পাগলিনী ।
শুদ্ধসত্ত্বে তনু মহাভাব-স্বরূপিণী ॥ ১২ ॥
উমারূপে
হিমালয়ে নগেন্দ্রনন্দিনী ।
করিলে কৈলাসে বাস হইয়া ঈশানী ॥ ১৩ ॥
জগত-জননীরূপে এখন লীলায় ।
পূর্ণিত অন্তরাধার স্নেহ-করুণায় ॥ ১৪ ॥
মহামন্ত্র মা
প্রণব করি উচ্চারণ ।
পদতলে নতশিরে পরশে চরণ ॥ ১৫ ॥
জানে না সে কি পাইল ভক্তি
নিরমল ।
কোটি কোটি জনমের সাধনার ফল ॥ ১৬ ॥
মা তোমার ধর মায়া দাও সরাইয়ে ।
দেখি মা
অভয়পদ নয়ন ভরিয়ে ॥ ১৭ ॥
করি চিত্র লীলাপট মনে বড় সাধ ।
মায়া যেন পথে নাহি ঘটায়
প্রমাদ ॥ ১৮ ॥
তুয়া পদ-প্রদর্শিকা তুমি গো জননী ।
হৃদয়ে আসিয়া ঊর কণ্ঠে বস তুমি ॥ ১৯ ॥
দাও খুলে তালা-আঁটা হৃদয়ের দ্বার ।
উঠুক রাগের বায়ু প্রসাদে তোমার ॥ ২০ ॥
পঞ্চমবর্ষীয়া এবে ব্রাহ্মণের বালা ।
মায়িক বালিকাবৎ করে ধূলাখেলা ॥ ২১ ॥
মানুষের
মত ঠিক গঠন-প্রণালী ।
মায়া-বিমোহিত মত নহে কার্যগুলি ॥ ২২ ॥
যে হও সে হও মাগো বিচারে কি কাজ ।
অভয় চরণ যেন জাগে হৃদি-মাঝ ॥ ২৩ ॥
মা হ'য়ে মা থাক তুমি করি নিবেদন ।
শ্রীপ্রভুর লীলারসে করি নিমগন ॥ ২৪ ॥
এক মর্মভেদী দুঃখ বড় বাজে প্রাণে ।
কেন এত দুঃখ হেন মাতা বিদ্যমানে ॥ ২৫ ॥
স্মরিলে দুঃখের কথা ফেটে যায় ছাতি ।
সিংহের শাবক খাই শিয়ালের লাথি ॥ ২৬ ॥
কি বল কি বল গো মা সহিতে কি পারি ।
বিশ্বেশ্বর প্রভুদেব তুমি বিশ্বেশ্বরী ॥ ২৭ ॥
নিরখি যখন মাগো চরণ-কমলে ।
অতি তুচ্ছ স্বর্গ ধরা ধরাতলে ॥ ২৮ ॥
যখন হৃদয়ে জাগে চরণ দুখানি ।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশেরে তৃণত্রয় গণি ॥ ২৯ ॥
ইঙ্গিতে জননী যদি তব আজ্ঞা পাই ।
উত্তরের হিমাচল দক্ষিণে বসাই ॥ ৩০ ॥
ভূতলে থাকিয়া ধরি গগনের চন্দ্র ।
হনুর সঙ্গেতে পারি করিবারে দ্বন্দ্ব ॥ ৩১ ॥
সকৃষ্ণ অর্জুন-রথ ফিরাইতে পারি ।
অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ড গোটা তোলপাড় করি ॥ ৩২ ॥
এদিকে করুণাময়ী ওদিকে আবার ।
পাষাণ হইতে শক্ত অন্তর তোমার ॥ ৩৩ ॥
আত্মপর নাই ভেদ অপরূপ কথা ।
মা হয়ে মা কাট তুমি সন্তানের মাথা ॥ ৩৪ ॥
মরিলে তরাস আসে গণেশ-কাহিনী ।
লোকে বলে মাথা তার উড়াইল শনি ॥ ৩৫ ॥
শনির কি সাধ্য আসে তাহার নিকটে ।
মা তুমি না বিলে সায় কেবা মাথা কাটে ॥ ৩৬ ॥
মা তুমি মারিলে কার সাধ্য করে ত্রাণ ।
তুমি মা কুপিলে নাই কাহারও এড়ান ॥ ৩৭ ॥
যে কালে হইল দক্ষ পিতা মা তোমার ।
তাঁর সনে কৈলে মা গো কিবা ব্যবহার ॥ ৩৮ ॥
ভূতে ডেকে মাথা কেটে পাড়াইলে ভূ'য়ে ।
মায়ের কি হবে কিছু না দেখিলে চেয়ে ॥ ৩৯ ॥
অমুণ্ড করিয়া তবু তুষ্টি নাই মনে ।
লোক-হাসি ছাগমুণ্ড দিলে গরদানে ॥ ৪০ ॥
ভকতে যতেক দয়া তাও ভাল জানি ।
লঙ্কা-রক্ষিকার বেশে যখন মা তুমি ॥ ৪১ ॥
দশানন আজীবন তপিল কিমতি ।
তাই কেহ না রহিল বংশে দিতে বাতি ॥ ৪২ ॥
এবে গুপ্ত অবতার এই অনুমানি ।
তাই কি এতেক কহ সহিতে জননী ॥ ৪৩ ॥
জপে তপে যোগী
যারে না পায় ধেয়ানে ।
সেই মাতা তুমি মা গো আঁখি বিদ্যমানে ॥ ৪৪ ॥
সম্মুখে পেয়েছি
এবে সব দুঃখ কব ।
মার ছেলে কেন কহ এতেব সহিব ॥ ৪৫ ॥
দেখি অসৎসারিগণে অতিশয় টান ।
গৃহীরা কি বানে-ভাসা পরের সন্তান ॥ ৪৬ ॥
তুমি তো করেছ গৃহী দিয়া মায়া-ঠুলি ।
ঘুরাতেছ ঘানি গাছে খাওয়ায়ে বিচালি ॥ ৪৭ ॥
ছুটে ছুটে মরি খেটে পেটে নাহি ভাত ।
তাহার উপরে মা তোমার কশাঘাত ॥ ৪৮ ॥
কি বিচার মা তোমার বুঝিবারে নারি ।
কোন ছেলে
কোলে কেহ ভূমে গড়াগড়ি ॥ ৪৯ ॥
মায়ের নিকট হেন শোভা নাহি পায় ।
এরূপ কোথায় করে কোন্
দেশী মায় ॥ ৫০ ॥
অমাতার ব্যবহার দেখে কত সই ।
কবে দিনু মুখুয্যের পাকা ধানে মই ॥ ৫১ ॥
ইচ্ছাময়ী মাতা তুমি জগৎ-পালিকা ।
নমো নমো শ্যামা-সুতা ব্রাহ্মণ-বালিকা ॥ ৫২ ॥
এক
নিবেদন মম চরণযুগলে ।
যত দুঃখ হোক যেন মন নাহি টলে ॥ ৫৩ ॥
নালিশ মায়ের কাছে যদি
মারে মায় ।
ছাওয়াল নিকটে কাঁদে অন্যত্রে না যায় ॥ ৫৪ ॥
তেমতি থাকিব মাগো এই
ভিক্ষা চাই ।
মা বলিয়া কাছে যেন কাঁদিয়া বেড়াই ॥ ৫৫ ॥
কি সুন্দর নরলীলা যাই
বলিহারি ।
হৃদয়ে উদয় যাহা আঁকিতে না পারি ॥ ৫৬ ॥
সাধ্যাতীত যদ্যপিহ প্রাণ নাহি
মানে ।
সতত প্রমত্ত মন লীলা-আন্দোলনে ॥ ৫৭ ॥
মায়ের সহিত হৃদে ঊরহ ঠাকুর ।
যেতে পথে
বাধাবিঘ্ন সব করি দূর ॥ ৫৮ ॥
শ্রীপ্রভুর লীলা-কথা মধুর কথন ।
পরম আনন্দে শুন একমনে মন ॥ ৫৯ ॥