৫২ শ্যামপুকুর বাটীতে ভক্তসঙ্গে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ

দ্বাচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ

১৮৮৫, ৬ই নভেম্বর

৺কালীপূজার দিবসে শ্যামপুকুর বাটীতে ভক্তসঙ্গে

শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরে বাটীর উপরের দক্ষিণের ঘরে দাঁড়াইয়া আছেন। বেলা ৯টা। ঠাকুরের পরিধানে শুদ্ধবস্ত্র এবং কপালে চন্দনের ফোঁটা।

মাস্টার ঠাকুরের আদেশে ৺সিদ্ধেশ্বরী কালীর প্রসাদ আনিয়াছেন; প্রসাদ হস্তে ঠাকুর অতি ভক্তিভাবে দাঁড়াইয়া কিঞ্চিৎ মস্তকে ধারণ করিতেছেন। গ্রহণ করিবার সময় পাদুকা খুলিয়াছেন। মাস্টারকে বলিতেছেন, “বেশ প্রসাদ।”

আজ শুক্রবার (২২শে কার্তিক, ১২৯২); আশ্বিন অমাবস্যা, ৬ই নভেম্বর, ১৮৮৫। আজ ৺কালীপূজা।

ঠাকুর মাস্টারকে আদেশ করিয়াছিলেন ঠনঠনের ৺সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতাকে পুষ্প, ডাব, চিনি, সন্দেশ দিয়ে আজ সকালে পূজা দিবে। মাস্টার স্নান করিয়া নগ্নপদে সকালে পূজা দিয়া আবার নগ্নপদে ঠাকুরের কাছে প্রসাদ আনিয়াছেন।

ঠাকুরের আর একটি আদেশ — ‘রামপ্রসাদের ও কমলাকান্তের গানের বই কিনিয়া আনিবে।’ ডাক্তার সরকারকে দিতে হইবে।

মাস্টার বলিতেছেন, “এই বই আনিয়াছি। রামপ্রসাদ আর কমলাকান্তের গানের বই।” শ্রীরামকৃষ্ণ বলিলেন, “এই গান সব (ডাক্তারের ভিতর) ঢুকিয়ে দেবে।”

গান   —   মন কি তত্ত্ব কর তাঁরে, যেন উন্মত্ত আঁধার ঘরে।
সে যে ভাবের বিষয়, ভাব ব্যতীত অভাবে কি ধরতে পারে ॥

গান   —   কে জানে কালী কেমন। ষড়্‌দর্শনে না পায় দরশন।

গান   —   মন রে কৃষি কাজ জান না।
এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা ॥

গান   —   গান - আয় মন বেড়াতে যাবি।
কালী কল্পতরু মূলে রে মন চারি ফল কুড়ায়ে পাবি ॥

মাস্টার বলিলেন, আজ্ঞা হাঁ। ঠাকুর মাস্টারের সহিত ঘরে পায়চারি করিতেছেন — চটিজুতা পায়ে। অত অসুখ — সহাস্যবদন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — আর ও গানটাও বেশ! — ‘এ সংসার ধোঁকার টাটি’। আর ‘এ সংসার মজার কুটি! ও ভাই আনন্দ বাজারে লুটি।’

মাস্টার — আজ্ঞা হাঁ।

ঠাকুর হঠাৎ চমকিত হইতেছেন। অমনি পাদুকা ত্যাগ করিয়া স্থিরভাবে দাঁড়াইলেন। একেবারে সমাধিস্থ। আজ জগন্মাতার পূজা, তাই কি মুহুর্মুহুঃ চমকিত এবং সমাধিস্থ! অনেকক্ষণ পরে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া যেন অতি কষ্টে ভাব সম্বরণ করিলেন।