গুরু বন্দনা

জয় জয় রামকৃষ্ণ বাঞ্ছা-কল্পতরু ।
জয় জয় ভগবান্ জগতের গুরু ॥ ১ ॥

জয় হে অনাথ-নাথ পতিত-পাবন ।
জয় জয় দীন-বন্ধু অধম-তারণ ॥ ২ ॥

কৃপাসিন্ধু দীনের ঠাকুর তুমি হরি ।
জয় রামকৃষ্ণ পরমহংস নামধারী ॥ ৩ ॥

পতিত পাবন জয় অগতির গতি ।
দীনশরণ তুমি দীনে রাখ প্রীতি ॥ ৪ ॥

ভুবন-পাবন জয় ভক্তগলহার ।
জগজ্জন-তারক হারক ভবভার ॥ ৫ ॥

জয় হৃদি-রত্নক ভরক ভব-ভয় ।
করণ-কারণ কর্তা হয় স্থিতি লয় ॥ ৬ ॥

তুমি শিব তুমি শক্তি নারায়ণ তুমি ।
তুমি রাম তুমি কৃষ্ণ অখিলের স্বামী ॥ ৭ ॥

তুমিই সচ্চিদানন্দ পূর্ণব্রহ্ম হরি ।
জয় জয় রামকৃষ্ণ নর-রূপধারী ॥ ৮ ॥

নিরাকার সাকার সবার ঘটে স্থিতি ।
জর জয় রামকৃষ্ণ ব্রহ্মাণ্ডের পতি ॥ ৯ ॥

বেদের অগম্য তুমি বেদের অপার ।
জয় জয় রামকৃষ্ণ সর্বসারাৎসার ॥ ১০ ॥

অনন্ত তোমার শক্তি লোকবোধাতীত ।
না দেখালে কোন জনে না হয় প্রতীত ॥ ১১ ॥

করুণাসাগর তুমি জীব-হিতকারী ।
জয় জয় রামকৃষ্ণ দ্বিজবেশধারী ॥ ১২ ॥

জয় প্রেম-ভক্তিদাতা অজ্ঞান-নিবারী ।
জয় জয় রামকৃষ্ণ তিন-তাপ-হারী ॥ ১৩ ॥

সেবানন্দদাতা তুমি শুদ্ধ-বুদ্ধিদাতা ।
জ্ঞানের জনক তুমি তুমি ভক্তি-মাতা ॥ ১৪ ॥

জীবদুঃখাতুর তুমি করুণা-নিদান ।
অধমে অভয় পদে যেচে দাও স্থান ॥ ১৫ ॥

দুঃখী দাসে বড় বাস বিনা প্রয়োজনে ।
দয়াল তোমার মত না দেখি ভুবনে ॥ ১৬ ॥

স্বার্থশূন্যে কর অন্যে কৃপারাশিদান ।
দ্বিতীয় কে বল তব সম দয়াবান্ ॥ ১৭ ॥

শুন রে অবোধ মন কহি কর মুড়ি ।
গাও গাও রামকৃষ্ণ দিবা-বিভাবরী ॥ ১৮ ॥

থাক মন অভয় কমল-পদে তাঁর ।
উদ্ধারি আপনা কর আমার উদ্ধার ॥ ১৯ ॥

জপ রামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণ নাম গাও ।
তরিয়া আপনি আগে আমারে তরাও ॥ ২০ ॥

ভঙ্গ পূজ রামকৃষ্ণ সেই রূপ ধ্যান ।
তিনি সকলের সার এই কর জ্ঞান ॥ ২১ ॥

ডাক রামকৃষ্ণে ছাড়ি কপট চাতুরী ।
জীব-হিত-সদাব্রত ভবের কাণ্ডারী ॥ ২২ ॥

ছি ছি মন ছাড় ছাড় কামিনী-কাঞ্চন ।
অকিঞ্চিতে কেন কর বৃথা আকিঞ্চন ॥ ২৩ ॥

ছাড়ি পাদপদ্মে মধু কেন মর বুলে ।
বিষময় সংসার কাঁটার কিয়াফুলে ॥ ২৪ ॥

গেছে পাখা তবু শিক্ষা এখন না হ'ল ।
মায়া অন্ধ কিয়া গন্ধ ভাবিছ কেবল ॥ ২৫ ॥

কিয়া-রেণু তোর তনু সর্বাঙ্গ ব্যেপেছে ।
কণ্ঠশ্বাস প্রাণে আশ আর কিবা আছে ॥ ২৬ ॥

কর না  বারেক রামকৃষ্ণ-গুণ-গান ।
নাহি কিছু রামকৃষ্ণ-নামের সমান ॥ ২৭ ॥

পতিত-পাবন নাম গিয়াছেন রেখে ।
দেখ ফল ক'রে বল একবার ডেকে ॥ ২৮ ॥

অমৃত অপেক্ষা তাঁর নাম মিঠে লাগে ।
মূর্তিমান হ'য়ে নাম হৃদয়েতে জাগে ॥ ২৯ ॥

নাহি কিছু রামকৃষ্ণ-নামের উপমা ।
যে করেছে সে মজেছে তারে আছে জানা ॥ ৩০ ॥

একে যদি খায় মিষ্ট অন্যে নহে মজা ।
অবিশ্বাসী হৃদয়ের ফল মাত্র সাজা ॥ ৩১ ॥

কোটিজন্মার্জিত পাপ হরে একবারে ।
কায়মনে যদি রামকৃষ্ণ নাম করে ॥ ৩২ ॥

দয়াল ঠাকুর নিজে বলেছেন কথা ।
তিনি দায়ী তাঁর নামে যাহার মমতা ॥ ৩৩ ॥

ভাবাবেশে উল্লাসে আশ্বাসি উচ্চরবে ।
পতিতপাবন নামে সকল সম্ভবে ॥ ৩৪ ॥

পাপ নাশ কিবা কথা সেবাভক্তি পায় ।
উপায় যে ভাবে মাত্র রামকৃষ্ণ পায় ॥ ৩৫ ॥

যাগ যজ্ঞ যপ তপ না পায় সন্ধানে ।
কি দেন ঠাকুর মোর নিলে তাঁর নামে ॥ ৩৬ ॥

যে যা করে দেখ মন কি কাজ বিচারি ।
গাও গাও রামকৃষ্ণ দিবা বিভাবরী ॥ ৩৭ ॥

দুবাহু তুলিয়া গাও সরল পরাণে ।
তাজ ব্যাজ লোকলাজ সরম-ভরমে ॥ ৩৮ ॥

নিষ্ঠামনে ইষ্ট জনে কর সারাৎসার। ।
সর্ব্বশ্রেষ্ঠ রামকৃষ্ণ ঠাকুর আমার ॥ ৩৯ ॥

সাজাইতে বড় সাধ আমার অন্তরে ।
নাহি অর্থ ধন-রত্ন সাজাতে তাঁহারে ॥ ৪০॥

স্বতই সুন্দর তিনি জন-মনোহর ।
ভুবন-মোহন মূর্তি সুন্দর আকর ॥ ৪১ ॥

যেই মতে সাজাইত মুক্তা-লতা-বনে ।
দাম বসুদাম আদি সুবল শ্রীদামে ॥ ৪২ ॥

সুদীর্ঘ মুকুতা-হার মুকুতার চূড়া ।
মুকুতা-বসন মুকুতার গুঞ্জবেড়া ॥ ৪৩ ॥

মুকুতায় সাজাইত শ্রবণ-কুণ্ডলে ।
মুকুতা-নূপুর দিত বাঁধি পদতলে ॥ ৪৪ ॥

মুকুতার বালা করি পরাইত হাতে ।
সাজাত মুকুতা দিয়া সাজিত যেমতে ॥ ৪৫ ॥

মুকুতায় সাজাইত মোহন বাঁশরী ।
সাজাইতে সেই মতে বড় সাধ করি ॥ ৪৬ ॥

ভুবন সাজান যিনি সাজাইতে তাঁরে ।
যামন হইয়া চাই চাঁদ ধরিবারে ॥ ৪৭ ॥

যদ্যপি করিতে প্রভু কর্মকার জেতে ।
বনাতাম সিংহাসন যেন আছে চিতে ॥ ৪৮ ॥

করিয়া কায়স্থ মোর হাতে দিলে কাঠি ।
দিবানিশি কাটি কাল কালি ঘাঁটি ঘাঁটি ॥ ৪৯ ॥

পেটের জ্বালায় ঘুরি সাহেবের দ্বারে ।
জনমের মত দুঃখ রহিল অন্তরে ॥ ৫০ ॥

সাজাইতে একমাত্র দিয়াছ চন্দন ।
ইহাতে বনাব যত সব আভরণ ॥ ৫১ ॥

কমল সহস্র দল থরে থরে আনি ।
মনোহর সিংহাসন বনাব অমনি ॥ ৫২ ॥

চন্দনের চূড়া চন্দনের মালা গলে ।
কিবা শোভা মনলোভা চন্দনকুগুলে ॥ ৫৩ ॥

চন্দনের মুক্তালতা ঘেরা চারি পারে ।
চন্দনের গুঞ্জবেড়া মন-প্রাণ হরে ॥ ৫৪ ॥

চন্দনের বনাইব বিচিত্র আসন ।
পরাব তোমারে প্রভু চন্দন-বসন ॥ ৫৫ ॥

নানা জাতি সুগন্ধি কুসুম আনি তুলি ।
সাজাই ঠাকুর মোর প্রাণের পুতুলি ॥ ৫৬ ॥

সুঘন দুধের ভোজা করিয়া যতনে ।
বারে বারে দিতে ভোগ বড় হয় মনে ॥ ৫৭ ॥

আরে মন সমর্পণ সব কর পদে ।
প্রাণ মান আদি যত বৈভব সম্পদে ॥ ৫৮ ॥

শুদ্ধ তাঁরে সার কর জান বৃদ্ধি বল ।
সম্পদ বিপদ সখা সহায় সম্বল ॥ ৫৯ ॥

কেন মন অকারণ অনিত্য সংসারে ।
বারে বারে মর ঘুরে ছাড়িয়া ঠাকুরে ॥ ৬০ ॥

ভাই বল বন্ধু বল কিবা সুত দারা ।
স্বার্থপর সব নর সময়েতে তারা ॥ ৬১ ॥

এখন সময় আছে কেন পাও কষ্ট ।
বল মন সর্বক্ষণ হরে রামকৃষ্ণ ॥ ৬২ ॥

অগণ্য প্রভুর ভক্ত ইষ্ট গোষ্ঠী জান ।
নাহিক আপন কেহ তাঁদের সমান ॥ ৬৩ ॥

সযতনে দেখ মন ভক্তে রেখ ক্রীতি ।
আত্মীয়স্বজন তাঁরা তাঁরা বন্ধু জ্ঞাতি ॥ ৬৪ ॥

ভক্তমধ্যে ছোট বড় জ্ঞান হয় ভ্রম ।
সকলে আমার পূজ্য বুঝাবে এমন ॥ ৬৫ ॥

ছোট বড় বিচারেতে নাহি অধিকার ।
সকলে বুঝিবে রামকৃষ্ণ-পরিবার ॥ ৬৬ ॥

রামকৃষ্ণ-ভক্তে বুঝ জীবন-জীবন ।
ভাব মন দিবা নিশি তাঁদের চরণ ॥ ৬৭ ॥

গৃহস্থ সন্ন্যাসী ভক্ত এই দুই শ্রেণী ।
সকলের রজজ্জ আশে লুটাও অবনি ॥ ৬৮ ॥