প্রথম খণ্ড

হনুমানের সঙ্গে খেলা


জয় জয় রামকৃষ্ণ বাঞ্ছাকল্পতরু ।
জয় জয় ভগবান জগতের গুরু ॥
জয় জয় রামকৃষ্ণ ইষ্টগোষ্ঠীগণ ।
সবার চরণরেণু মাগে এ অধম ॥


বাল্যলীলা শ্রীপ্রভুর বড়ই সুন্দর ।
শুন মন কেমনে খেলেন গদাধর ॥ ১ ॥

বিশ্বপতি শিশুমতি শিশুর আকার ।
লীলা তাঁর ধরামাঝে বুঝা অতি ভার ॥ ২ ॥

সব অমানুষী কার্য সম্ভবে না নরে ।
দেখে লোকে তবু কিছু বুঝিতে না পারে ॥ ৩ ॥

যতই ঐশ্বর্য দেখে গ্রামবাসিগণ ।
গদা'য়ে ঈশ্বরভাব না আসে কখন ॥ ৪ ॥

নিকটে সরাইঘাটা যথা মায়াপুর ।
মামাবাড়ি সেই গ্রামে ছিল শ্রীপ্রভুর ॥ ৫ ॥

একবার মার সঙ্গে তথায় গমন ।
পথিমধ্যে জননীরে বলিলা বচন ॥ ৬ ॥

বস্ত্রে করি আচ্ছাদন কোলে কর মোরে ।
পথে যেতে কেহ যেন না দেখে আমারে ॥ ৭ ॥

যথা কথা মাতা করি বস্ত্রে আবরণ ।
গদায়ে করিয়া কোলে করেন গমন ॥ ৮ ॥

পথ-সন্নিকটে এক পীরের আস্থান ।
সুশীতল বৃক্ষতল মনোরম স্থান ॥ ৯ ॥

সন্ধান পাইয়া মায়ে কন ধীরে ধীরে ।
দেহ দেহ দেহ গো মা নামাইয়া মোরে ॥ ১০ ॥

বৃক্ষমূলে অধিষ্ঠিত যথা সত্যপীর ।
প'ড়ে কত হাতী ঘোড়া বানান মাটির ॥ ১১ ॥

তাড়াতাড়ি ছুটিয়া গেলেন গদাধর ।
কি জানি কি ভাবে ভরে তাঁহার অন্তর ॥ ১২ ॥

গদাই বসিয়া তথা রহিলা অমনি ।
কানে না প্রবেশে যত ডাকেন জননী ॥ ১৩ ॥

কোনমতে তথা হ'তে উঠিতে না চান ।
নিরখিয়া জননীর আকুল পরাণ ॥ ১৪ ॥

বুঝাইয়া নানামতে কোলে নিতে তাঁয় ।
তবে কতক্ষণ পরে ভাব ভেঙ্গে যায় ॥ ১৫ ॥

বড়ই সুন্দর শিশু গদায়ের কথা ।
পুনরায় দ্বিতীয় বিপদে পড়ে মাতা ॥ ১৬ ॥

পথে যেতে পূর্ববৎ গদাধর কোলে ।
উপনীত পথপ্রান্তে কোন বৃক্ষতলে ॥ ১৭ ॥

ডালে মূলে মুখপোড়া অসংখ্য বানর ।
দেখিয়া বড়ই খুশী হৈলা গদাধর ॥ ১৮ ॥

হাতে ছড়ি তাড়াতাড়ি গদাধর যান ।
যেখানে বসিয়া মুখপোড়া হনুমান ॥ ১৯ ॥

অতি অল্পবয়ঃ শিশু ভয় নাহি মনে ।
তাড়া করিলেন গিয়া যত হনুমানে ॥ ২০ ॥

আপোষা বনের পশু হনুমানগণ ।
গদা'য়ের প্রতি নাহি করে আক্রমণ ॥ ২১ ॥

নামিয়া আইল যারা বসেছিল ডালে ।
নানা রঙ্গে গদায়ের সঙ্গে তারা খেলে ॥ ২২ ॥

ছুটাছুটি খেলে কত যত হনুমান ।
তা দেখিয়া জননীর আকুল পরাণ ॥ ২৩ ॥

হিংসা করে পাছে কোন বনের বানর ।
ঘন ঘন ডাকে তাঁয় আয় গদাধর ॥ ২৪ ॥

সামান্য ঘটনা কথা বড় নয় বেশী ।
তথাপি সকল দেখ কার্য অমানুষী ॥ ২৫ ॥

বলিবার নহে কথা বলিতে কি আছে ।
বনের বানর কোথা শিশুসনে নাচে ॥ ২৬ ॥

গাছে থাকে কাছে গেলে করে আক্রমণ ।
কালিমাখা মুখেতে ভ্রূকুটি-প্রদর্শন ॥ ২৭ ॥

দেখ বিপরীত রীতি শিশু-প্রভুসনে ।
পশুরূপী হনু সব চিনিল কেমনে ॥ ২৮ ॥

প্রভু অবতারে যত পশুপাখিগণ ।
গুল্ম লতা তরু কিংবা স্থাবর জঙ্গম ॥ ২৯ ॥

চেতন কি জড়-দেহ যে কোন আকার ।
জানি না কে কোন্ ভক্ত কোথা আছে তাঁর ॥ ৩০ ॥

অতএব শুন মন প্রভু-অবতারে ।
হীনাধম তুচ্ছ জ্ঞান না কর কাহারে ॥ ৩১ ॥

জয় সংবুদ্ধিদাতা দয়ার সাগর ।
ধরাধামে শিশুরূপী প্রভু গদাধর ॥ ৩২ ॥

গোচর তাহার যাবে সৎবুদ্ধি কর ।
হেন সংবৃদ্ধি মোরে দেহ দয়াময় ॥ ৩৩ ॥

নতুবা কে কোন্ জনা কি প্রকারে চিনি ।
ঘন মায়া-ঘোরে আঁটা নয়ন দু'খানি ॥ ৩৪ ॥